সর্বশেষ
14 Nov 2025, Fri

কেন্দুয়ায় ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ

কোহিনূর আলম,কেন্দুয়া (নেত্রকোণা)প্রতিনিধিঃ

নেত্রকোণার কেন্দুয়ার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রোয়াইলবাড়ী ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটিতে বিদ্যুৎসাহী সদস্য নিয়োগসহ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ১৪ অভিযোগ।

কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব এবং একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ তুলে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলী উসমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে প্রতিবেদন দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের সহকারী অধ্যাপক ও শিক্ষক প্রতিনিধি মো. সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর পাঠানো অভিযোগপত্রে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলী উসমানের বিরুদ্ধে ১৪টি গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সেপ্টেম্বর ২০২০ থেকে আলী উসমান টানা পাঁচ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে বহাল রয়েছেন। বিধি অনুযায়ী এক বছরের মধ্যে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ ও নিজ দায়িত্বে প্রত্যাবর্তনের কথা থাকলেও তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পদটি শূন্য রেখেছেন।এ সময়ে বিতর্কিতভাবে ৪ জন কর্মচারী নিয়োগের অভিযোগও উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে তৎকালীন পরিচালনা কমিটির সদস্য মোস্তফা জামান মঞ্জুর বলেন,রেজুলেশনে সাইন করে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হবার পরেও কী করে ৪জনকে নিয়োগ দেয়া হলো সেটা তদন্তের দাবি রাখে।পাশাপাশি গত পাঁচ বছর ধরে কোনো রেজুলেশন বা নোটিশ ছাড়াই উপাধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানটিতে অনুপস্থিত রয়েছেন। তারপরও তাঁকে পূর্ণ বেতন প্রদান করা হচ্ছে কিভাবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলী উসমান বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষেই তাকে পূর্ণ বেতন প্রদান করা হচ্ছে।আমি কোন অনিয়ম করিনি।

শিক্ষক প্রতিনিধি সিদ্দিকুর রহমানের প্রশ্ন—“উপাধ্যক্ষ থাকতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের প্রয়োজন কী?” তিনি আরো বলেন, প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন যাবৎ আর্থিক লেনদেন নিজ হাতে পরিচালনা করেছেন আলী উসমান। একাধিকবার হিসাব চাওয়া হলেও তা প্রদান করা হয়নি। এডহক কমিটি গঠনের পর প্রথম সভায় অডিট কমিটি করা হলেও এক বছরেও অডিট রিপোর্ট পেশ করা হয়নি।

অভিযোগে আরও বলা হয়,পর্যাপ্ত ফান্ড থাকা সত্ত্বেও ৬ মাস ধরে শিক্ষকদের সম্মানি বন্ধ ছিল,১% প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি,উন্নয়ন কমিটি থাকা সত্ত্বেও বহু কাজে একক সিদ্ধান্ত বা নিষ্ক্রিয়তার পরিচয় পাওয়া গেছে।

এনটিআরসিএ–তে শূন্য পদের চাহিদা না পাঠানোয় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক প্রতিনিধি। এমপিও কপির ভুল সংশোধন ও সরকারি নির্দেশনার পরও EFT চালুর জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনও করা হয়নি। শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনেও অনিয়ম করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। নিজের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে ভিন্ন ভিন্ন তফসিল প্রকাশ ও স্তর পরিবর্তনের মতো অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। এ ছাড়া অনুপস্থিতি গোপন রাখতে মুভমেন্ট রেজিস্টার ব্যবহার না করার বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত ৮ মাস আগেই নেওয়া হলেও এখনো তহবিল চালু হয়নি। শিক্ষকদের এমপিও ভুক্তির তারিখ ও ব্যাংক তথ্য গোপন রেখে রেজুলেশন করার অভিযোগও করা হয়েছে—যা হয়রানির উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করেন মো. সিদ্দিকুর রহমান। এ ছাড়া উপকমিটি বিস্তার বা সদস্য অপসারণে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে কমিটি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টার অভিযোগও যোগ করেছেন তিনি।মো. সিদ্দিকুর রহমান অভিযোগপত্রে দাবি করেন, “এই সকল অনিয়মের ফলে প্রতিষ্ঠানিক পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে,শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে এবং শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।” তিনি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে দ্রুত তদন্ত ও প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।অভিযোগপত্রের একটি অনুলিপি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকেও প্রদান করা হয়েছে।

দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা, আর্থিক অস্বচ্ছতা, পদায়ন জটিলতা, শিক্ষকদের মধ্যে বৈষম্য এবং পরিচালনা কমিটির কার্যক্রমে অনিয়ম—সব মিলিয়ে রোয়াইলবাড়ী ফাজিল মাদ্রাসা গভীর সংকটে পড়েছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও সুশাসন রক্ষায় দ্রুত তদন্ত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *