পবিত্র মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মাস। এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে সিয়াম (রোজা) অন্যতম। এই মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মুসলমানরা নিজেদের আত্মিক পরিশুদ্ধি ঘটায় এবং তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করে। রমজান শুধু রোজা রাখার মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, ইবাদত-বন্দেগি, দান-সদকা ও আত্মসংযমের মাস।
রমজান মাসের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন:
“রমজান মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সঠিক পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৫)
রমজান মাসে মুসলমানরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল ধরনের পানাহার ও কু-প্রবৃত্তি থেকে বিরত থাকে। রোজার মাধ্যমে মানুষ আত্মসংযম ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা লাভ করে।
রমজান কেবল শরীরের উপবাসের মাস নয়, এটি মূলত আত্মার পরিশুদ্ধির মাস। আত্মশুদ্ধির জন্য প্রয়োজন সংযম, ধৈর্য ও ইবাদত। রমজান মাসে রোজা রাখার ফলে মানুষের মধ্য থেকে হিংসা, লোভ, অহংকার ও কুপ্রবৃত্তি দূর হয়।
রমজান আমাদের সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণ শেখায়। আমরা ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করি, কিন্তু কোনো ধরনের নৈতিক বিচ্যুতি হতে বিরত থাকি। এটি ধৈর্যশীলতা ও সহনশীলতার শিক্ষা দেয়।
রমজানের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন। মহান আল্লাহ বলেন:
“হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।” (সূরা আল-বাকারা: ১৮৩)
তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে মানুষ পাপাচার থেকে বিরত থাকে এবং ন্যায়নিষ্ঠ জীবনযাপন করতে শেখে।
রমজান কুরআন নাজিলের মাস। এই মাসে মুসলমানরা বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করে, এর শিক্ষা গ্রহণ করে এবং তা জীবনে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।
রমজান মাসে ইবাদত-বন্দেগির গুরুত্ব অনেক বেশি। এ সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি তারাবিহ, তাহাজ্জুদ, দোয়া ও জিকির করা হয়।
রমজান মাসে আত্মশুদ্ধি অর্জনের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনুসরণ করা প্রয়োজন:
১. নিয়ত ও ইখলাস (বিশুদ্ধ নিয়ত রাখা)ঃ
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখা ও ইবাদত করা উচিত।
২. নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াতঃ
নিয়মিত নামাজ আদায় ও কুরআন তিলাওয়াত করলে আত্মশুদ্ধি অর্জন সহজ হয়।
৩. দান-সদকা ও দুঃস্থদের সাহায্য করাঃ
রমজান দান-সদকার মাস। জাকাত ও সাদকা আদায়ের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি ঘটে।
৪. গীবত ও অন্যায় থেকে দূরে থাকাঃ
অন্যকে কষ্ট দেওয়া, গীবত করা বা মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৫. ধৈর্য ও সংযমের চর্চা করাঃ
রোজার মাধ্যমে ধৈর্য ও সংযমের শিক্ষা নিয়ে তা জীবনে প্রয়োগ করতে হবে।
রমজান মাস আত্মশুদ্ধি, সংযম ও তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই মাসে আমরা যদি আমাদের চরিত্র ও আচরণকে সংশোধন করতে পারি, তবে তা আমাদের সারাজীবনের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে রমজানের শিক্ষা অনুসারে জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দেন। আমিন।
মোঃ নাজমুল ইসলাম (সাংবাদিক ও লেখক)

