
মদন(নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ
৪ বছরেও শেষ হয়নি নেত্রকোণার মদন উপজেলায় রামপুর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ।অথচ এই কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল ২০২৩ ডিসেম্বরে।বারবার সময় বাড়িয়ে বিল নিলেও কাজের দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। এতে শ্রেণি কক্ষ সংকটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বিদ্যালয়টিতে ঝড়বৃষ্টি ও রোদের মাঝে ভাঙ্গাচুড়া টিনসেড কক্ষে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট কক্ষে অস্থায়ী টিনের ঘরে প্রচন্ড গরমের মধ্যে গাদাগাদি করে বসে অসুস্থ হয়ে যায়। পাঠদানের পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকেরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের রামপুর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নিমার্ণের কাজ পায় ময়মনসিংহের নাঈম এন্ড খন্দকার নামীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান । এ কাজে সরকার মোট বরাদ্দ দেয় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা প্রায়। ২০২৩—২৪ অর্থ বছরে এ ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। ৪ বছর শেষ হয়ে গেলেও বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজের এখনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত মাত্র ৬০ শতাংশের মতো কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রাখতো বলে গাফলতি করে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করেনি। আরও অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষমতার দাপটে বড় বড় কাজ ভাগিয়ে নিতো এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের ইচ্ছে মতো কাজ না করেও বিল উত্তোলন করতো। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজ না করে পালিয়ে গেছে এ প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৬০% কাজ শেষ করলেও ৬টি বিল উত্তোলন করে নিয়ে নেয় ৯৩ লাখ টাকা।
এ নিয়ে বিদ্যালয়টিতে বুধবার(৯ জুলাই) সরেজমিনে গেলে, টিনসেড একটি ভাঙ্গা কক্ষে ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের খেলার মাঠটিও ইট,সুরকি থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারছে না। শিশুরা সমাবেশ করছে বারান্দায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, শুরু থেকেই নিম্ন মানের ইট,বালি ব্যবহার করেই এ ভবনটি নির্মাণ করছে। তবে শিক্ষকরা জানিয়েছেন ভবনের প্রায় ৬০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
রামপুর কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মান্না বেগম (চলতি দায়িত্ব) বলেন, এর আগে অন্য একজন ঠিকাদার আমাদের স্কুলের সামান্য কাজ করে পালিয়ে গেছে।নতুন একজন ঠিকাদার কাজ করছেন, তবে ধীরগতির কাজ হচ্ছে। যে কাজটি ১ বছরের মধ্যে হওয়ার কথা,এখন ৪ বছরেও হচ্ছে না। টিনসেড ভাঙ্গা ঘরটিতে খুবই কষ্টে ক্লাস পরিচালনা করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মাঠটিও বন্ধ। এখন শিশুরা বারান্দায় সমাবেশ করছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা জানিয়েছে জুনের মধ্যে শেষ হবে। কিন্তু কই শেষ হলো না তো?এখনও ৪০% কাজ বাকি। কবে শেষ হবে তাও জানি না।শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষ না থাকায় পাশে টিনের ঘরে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস নিতে হচ্ছে। গরমে শিশুরা অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।এখন বর্ষা মৌসুম,ভাঙ্গা টিনের ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক সাইফ উদ্দিন খন্দকার জানান, আমি শুরু থেকেই কাজটি করিনি। আমার নামের লাইসেন্সটি ব্যবহার করে অন্যজন কাজটি করছে।এর দায়ভার তাকেই নিতে হবে।
উপজেলা প্রকৌশলী শাহদাত হোসেন বলেন,৫ আগষ্টের পর ঠিকাদার পালিয়ে যায়, ফলে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়।এখন নতুন একজনকে দেয়া হয়েছে।কাজটি আবার শুরু করেছে,আশা করছি দ্রুত কাজটি এ ঠিকাদার শেষ করবে।
